বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ

বিআরটিএতে ৪১ হাজার গাড়ির বিপরীতে একজন মোটরযান পরিদর্শক

Passenger Voice    |    ০২:১২ পিএম, ২০২০-০৮-২৪


বিআরটিএতে ৪১ হাজার গাড়ির বিপরীতে একজন মোটরযান পরিদর্শক

কোনো গাড়ি (মোটরযান) রাস্তায় চালানোর উপযোগী কিনা, তা পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। মাঠ পর্যায়ে কাজটি করেন বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শকরা। নিয়ম অনুযায়ী, ৫৯টি উপাদান পরীক্ষা করে সেগুলো গ্রহণযোগ্য মানে উত্তীর্ণ হলে ফিটনেস সনদ পাওয়ার যোগ্য হয় গাড়ি। তবে জনবল সংকটের কারণে নিয়ম মেনে কাজটি করতে পারছেন না বিআরটিএ মোটরযান পরিদর্শকরা।

দেশে বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন নেয়া গাড়ির সংখ্যা ৪৪ লাখ ৭১ হাজার (জুন ২০২০ পর্যন্ত)। এর বিপরীতে বিআরটিএতে মোটরযান পরিদর্শকের পদ ১২৫টি। বর্তমানে কর্মরত আছেন ১০৯ জন। এ হিসাবে প্রতি ৪১ হাজার গাড়ির বিপরীতে একজন করে মোটরযান পরিদর্শক কাজ করছেন।

দেশে প্রতি বছরই বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। স্বভাবতই বাড়ছে ফিটনেস সনদের চাহিদা। ২০১২-১৩ অর্থবছর সাড়ে চার লাখ ফিটনেস সনদ ইস্যু ও নবায়ন করেছিল বিআরটিএ। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিআরটিএর ৫৭টি জেলা সার্কেল অফিস ও পাঁচটি মেট্রো অফিসের কার্যালয় থেকে ফিটনেস সনদ ইস্যু করা হয় সাত লাখের বেশি। গাড়ির সংখ্যা বছর বছর বাড়লেও মোটরযান পরিদর্শকের সংখ্যা বাড়ছে না। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সীমিত জনবল দিয়ে এত বিপুলসংখ্যক গাড়ির ফিটনেসের বিষয়গুলো দেখভাল করা অসম্ভব। জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি ফিটনেস পরীক্ষায় আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারেরও পরামর্শ দিয়ে আসছেন তারা।

আরো পড়ুন >>> গ্রাহক হয়রানি করলে বিআরটিএ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাঃ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ

জনবলের সংকট থাকায় বিআরটিএর ফিটনেস সনদ ইস্যু কার্যক্রমে তেমন কোনো নিয়মই মানা হচ্ছে না। একটি গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষার সময় ৫৯টি বিষয় দেখার কথা থাকলেও জরুরি কয়েকটি বিষয় ছাড়া আর কিছু দেখার সুযোগ পাচ্ছেন না পরিদর্শকরা। ফলে রাস্তায় অনেক আনফিট গাড়ি চলার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। পরবর্তী সময়ে যেগুলো হয়ে উঠছে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে ফিটনেস সনদ একটি কাগুজে বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাড়ির ফিটনেস ঠিক থাকাটা জরুরি নয়, জরুরি হয়ে পড়েছে ফিটনেস সনদ থাকা।

সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী, বিআরটিএতে জনবল সংখ্যা ৮২৩। এর মধ্যে মোটরযান পরিদর্শকের পদ ১২৫টি। এই সীমিত জনবল দিয়ে বিপুল পরিমাণ মোটরযানকে নিয়ন্ত্রণ করা বিআরটিএর জন্য বেশ চ্যালেঞ্জের। এমন পরিপ্রেক্ষিতে সাংগঠনিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে ২ হাজার ৩১৫ জনবলবিশিষ্ট নতুন একটি কাঠামো অনুমোদনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে মোটরযান পরিদর্শকের পদ রাখা হয়েছে ১৩৩টি। আরো ১১১টি সহকারী মোটরযান পরিদর্শকের পদ রাখা হয়েছে। নতুন এই জনবল কাঠামো এখনো অনুমোদন পায়নি। বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন জনবল কাঠামো অনুমোদন হলেও মোটরযান পরিদর্শকের স্বল্পতা রয়েই যাবে। দেশের বিদ্যমান চাহিদার বিপরীতে বিআরটিএতে অন্তত ১ হাজার মোটরযান পরিদর্শক থাকা উচিত বলে মনে করছেন তারা।

আরো পড়ুন >>>> ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া গাড়ির কাগজপত্র হালনাগাদের সুযোগ

জনবলে বিআরটিএ যেমন পিছিয়ে, তেমনি সড়ক পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ফিটনেস পরীক্ষার জন্য আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারেও পিছিয়ে রয়েছে। বর্তমানে মোটরযানের ফিটনেস পরীক্ষার জন্য কেবল বিআরটিএর মিরপুর সার্কেল অফিসে একটি ভেহিকল ইন্সপেকশন সেন্টার (ভিআইসি) রয়েছে। যন্ত্রটি ব্যবহার করে ২০১৮-১৯ অর্থবছর সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৬৮টি মোটরযান পরিদর্শন করা হয়।

বিআরটিএতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরপুর সার্কেল অফিসের ভিআইসি যন্ত্রটির পরিসর আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এর বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের কয়েকটি বড় ও ব্যস্ত সার্কেল অফিসে ভিআইসি স্থাপনের জন্য পরিকল্পনা হচ্ছে। ভিআইসি স্থাপনে কারিগরি সহায়তার জন্য বিভিন্ন দাতা সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ করছে বিআরটিএ।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় বিআরটিএর পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) লোকমান হোসেন মোল্লার সঙ্গে। তিনি বলেন, বিআরটিএর বিভিন্ন সেবা আধুনিকায়ন ও ডিজিটালাইজ করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় মোটরযানের ফিটনেস পরীক্ষার জন্য মিরপুরে একটি ভিআইসি স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে এটির মাধ্যমে ফিটনেস পরীক্ষার কার্যক্রম চালু রয়েছে। বিআরটিএর আরো যেসব ব্যস্ত সার্কেল অফিস আছে, সেখানেও একই ধরনের যন্ত্র বসানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

আরো পড়ুন >>>> পছন্দের গাড়ির নম্বর নেওয়ার সুযোগ দিল সরকার​​​​​​​

মোটরযান পরিদর্শনের সব কাজ যন্ত্রের মাধ্যমে করা হলে মোটরযান পরিদর্শকদের কাজ কমে আসবে কিনা, এমন প্রশ্ন করা হলে লোকমান হোসেন মোল্লা বলেন, যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হলেও মোটরযান পরিদর্শকদের লাগবে। তাদের কাজ হয়তো কিছুটা সহজ হবে। কিন্তু কোনোভাবেই কাজ কমবে না।

বিআরটিএর প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করেন মোটরযান পরিদর্শকরা। চোখে দেখে গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ঠিক আছে কিনা তা বোঝার চেষ্টা করেন তারা। এ প্রক্রিয়ায় একটি গাড়ি পরিদর্শন করতে একজন মোটরযান পরিদর্শকের সময় লাগে ৫-৬ মিনিট। অন্যদিকে মিরপুরে ফিটনেস পরীক্ষার জন্য যে যন্ত্রটি বসানো হয়েছে, তাতে একটি গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করতে সময় লাগছে অন্তত ১৫ মিনিট। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সময় কম লাগলেও তাতে গাড়ির সঠিক অবস্থা উঠে আসে না। গাড়ির নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকেই যায়। যন্ত্রের মাধ্যমে কাজটি পুরোপুরি সঠিকভাবে করা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।